Short Stories

একটি অডিশন ॥ মেহেদী শামীম

By Mehedi Shamim | 16 Jan, 2022

একটি অডিশন ॥ মেহেদী শামীম

ঘরটায় কোনো সিগারেটের গন্ধ নেই। যদিও এখানে ক্রিয়েটিভ আইডিয়ার নির্মাণ হয়।  আইডিয়া নির্মাণ আর সিগারেট অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকলেও এই রুমে তেমন সিগারেটের আসর বসে না।  যদি কোনো মেয়ে এখানে এসে সিগারেট খায়, তবে তার জন্য অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। ছেলেদের এই ঘরে সিগারেট খাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ।

 

ঘরের প্রতিটি জানালায় ভারি পর্দা দেওয়া। আলু মজুদ রাখা কোল্ডস্টোরেজ ঘরের মতো অনেকটা গুমোট হয়ে আছে।  আলভির দর্শন হলো—খারাপ ছেলেরা সিগারেট খায়।  আর ভালো ছেলেরা নেশা করলে, শুধু মদ খায় কিন্তু সিগারেট খায় না।  আর সে কখনো খারাপ ছেলে হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত হতে চায় না।  তাই সিগারেট খেলেও লুকিয়ে-চুরিয়ে খায়।  এই অফিস কাম আড্ডা দেওয়ার জায়গাটার প্রধান কর্তা হলো আলভি।

 

সিনেমা বানানোই প্রধান উদ্দেশ্য তাদের। এখানে তাদের বলতে বোঝানো হয়েছে একদল তরুণ-তরুণী।  যারা নিয়মিত এখানে আসে। এই সিনেমা বানানোর ফাঁকে ফাঁকে তারা মানুষের শরীরের মধ্যে কলম চালিয়ে অঙ্ক কষতে পছন্দ করে।  তাদের বিশ্বাস—জগতের সমস্ত কিছুর সমাধান ওই শরীরের মধ্যে নিবিড়ভাবে রয়েছে।

 

আজকে তীব্র গরম বাইরে। আলভি আর একজন সহযোগী অপেক্ষা করছে।  একটি মেয়ের জন্য।  নতুন গল্প নির্মাণ করবে তারা। আলভি বার বার কম্পিউটারে পুরনো প্রোডাকশনগুলো প্লে করে করে দেখছে।  আর নিজের কাজের মুগ্ধতায় নিজেই বিগলিত হচ্ছে।

 

তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো।

 

অপ্রত্যাশিতভাবে মেয়েটির সঙ্গে আরেকটি ছেলে।  তাতে অবশ্য আলভির কিছু যায় আসে না।  কারণ তার হাতে আছে জাদুর চেরাগ। দিয়াশলাইতে ঘঁষা দিলেই জ্বলে ওঠে আগুন।  এ সব ব্যাপার অনেকবার সে ম্যানেজ করেছে।  যখন-তখন এ সব ছেলেদের সঙ্গে মেয়েরা সম্পর্ক চুকিয়ে নেয়।

 

হুড়মুড় করে তাদের পরিচয়পর্ব শেষ।  কারণ এই পর্বে খুব একটা সময় অপচয় করে না আলভি।  এবার অডিশনের পালা—

 

রুকাইয়া অন-স্ক্রিনে তোমাকে একটি সাহসী রোল প্লে করতে হবে।

 

হুম আমি তো অনেক সাহসী।  অন্য মেয়ের মতো তেলাপোকা-টিকটিকি ভয় পাই না।  আমার অ্যাডভেঞ্চার কিছু করতে খুব ভালো লাগে।

 

ব্যাপারটা ঠিক ওরকম না।  ধরো…

 

ওহ আমাকে দিয়ে কি অ্যাকশন টাইপ কোনো রোল প্লে করাবেন।  আমি কিন্তু ফাইট করতে পারি।

 

না, অ্যাকশন না।  ধরো, বাথটাবে…(খানিকটা অস্পষ্ট)

 

তবে কি বলেন (পরিষ্কার বোঝা যায়নি)।  আমার সমস্যা নাই তো আমি আত্মবিশ্বাসী।  যেকোনো কঠিন দৃশ্য করতে পারব।

 

তোমাকে একটু বোল্ড হতে হবে।  কারণ চরিত্রটি…

 

আমি অনেক স্ট্রং মেন্টালিটির। আমি পারব, আপনি ভরসা রাখুন। ওই যে নতুন একটা গান ভাইরাল হয়েছে না।  সনু তুমি আমাকে ভরসা করো না…!’

 

আরে বাবা, আমাকে তো বলতে দিবা…

 

আচ্ছা, বলেন।

 

একটা অন্ধকার রুমে…

 

বুঝতে পারছি এটা ভুতের সিনেমা।

সমস্যা নাই, আমার অন্ধকারে ভয় নাই।  আমি পারব, আমাকে গল্পটা দেন। একটু পড়ি।

 

আসলে আমার গল্পটা এখনো লেখা শেষ হয়নি, আমার মাথায় আছে।  তোমাকে দেখেই আমার মধ্যে আরও গল্প জমাট বাঁধছে।

 

তাহলে মাথা থেকেই বলেন।  আমার মনে থাকবে, আমার আবার মেমোরিজ অনেক ভালো।

 

আচ্ছা শোনো, তোমাকে একটা কাজ দেই—ওইটা আগে করো। আজকে রাতে ক্ল্যাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভাল হচ্ছে, সেখানে গিয়ে সারা রাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শোনো।  কারণ তোমাকে সবার আগে ভালো শ্রোতা হতে হবে রুকাইয়া।

 

পাশে বসে থাকা বয়ফ্রেন্ডটি মাথা নিচু করে বসে আছে।  তার পরিচয় এই গল্পে অতটা জরুরি নয়।  কারণ এ অবস্থায় জগতের সব বয়ফ্রেন্ডের ভূমিকা ও অনুভূতি প্রায় সমান। তারা নিজেদের ছাগলের চার নম্বর বাচ্চা ভাবতে শুরু করে।  তাদের নিয়ে তেমন আলোচনার জায়গা তৈরি হয় না।

 

কিছুটা সময়ের জন্য রুকাইয়া ও তার বয়ফ্রেন্ড একসঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে।  কারণ সবাই ঘর ছেড়ে সিগারেট খেতে বাইরে গেছে।

 

রুকাইয়াকে একা ঘরে পেয়ে তার বয়ফ্রেন্ড একদম দুষ্টুমি করেনি।  সে বোঝাতে চেষ্টা করেছে, তুমি ভুল জায়গায় এসেছ।  কিন্তু সেই সুযোগ ছেলেটা পায়নি।

 

কারণ মেয়েটি আবার কথা বলা শুরু করেছে, বেবি শোনো, দেখো আমার ডিরেক্টর কত ভালো।  তুমি কি সব উল্টা-পাল্টা বলতেছিলা।  আসতে চাইতে ছিলা না।  দেখলা কতটা সংস্কৃতিমনা মানুষ।  আমাকে সে ক্ল্যাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভালে গান শোনার জন্য যেতে বলছে।  তোমার কাছে তো তুমি ছাড়া সমস্ত পুরুষ খারাপ।  চরিত্র নেই।  দেখছো, সে আমাকে অলরেডি অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে দিলো।

 

ছেলেটির সরল প্রশ্ন, কেন?

 

বোঝো না তুমি।  বোকা ছেলে।  গল্পের চরিত্রটা ভালো করে বোঝার জন্য।

 

আচ্ছা, তোমার চরিত্রটা কী হবে এই স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমায়?

 

এ কথার উত্তর দেওয়ার আগে আগেই আলভিসহ তার সহযোগীর প্রবেশ।

 

আলভি এসেই বলতে শুরু করলো,  তো, কী চিন্তা করলে গল্পটা নিয়ে?

 

রুকাইয়া আকাশ থেকে পড়লো,  কই, আপনি তো কোনো গল্প দেননি।  আমি কী চিন্তা করব?

 

ওহ, তাই তো।  আচ্ছা, আমি মুখে মুখে বলছি।

 

সব গল্প বলতে হবে না।  শুধু আমার চরিত্রটা বলেন।  কী চরিত্র হবে আমার?

 

দেখো, অন্য একটা চরিত্রে যাওয়া অতটা সহজ না।  অনেক কসরত করতে হবে তোমাকে।

 

সমস্যা নাই, আমি তো সব করব আপনার কথা মতো।  উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতও শুনতে যাব।  আমার চরিত্রের বর্ণনাটা একটু দেন।

 

দেখো রুকাইয়া, ব্যাপারটা এত সহজ না।  অন্য একটা চরিত্রে প্রবেশ করতে হলে তোমাকে সবার আগে নিজের চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

 

কিভাবে?

 

প্রথমে তোমাকে চরিত্রহীন হতে হবে, তারপর তো তোমাকে আমি সিনেমায় চরিত্র দিতে পারব।  তার আগে কিভাবে সম্ভব?

 

আমি চরিত্রহীন হব?

 

পাশ থেকে রুকাইয়ার বয়ফ্রেন্ড উঠে দাঁড়ালো এবং দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো।  তার পেছন পেছন রুকাইয়া দৌড়াতে থাকলো।  আর একটু ভারী আওয়াজে বার বার একটা বাক্য বলতে থাকলো, দেখো, এই চরিত্র লম্পটের সমার্থক শব্দ না।

 

তখন আলভিরা ঘরের মধ্যে কী করছিল অনুমান করা সম্ভব না।  তারা সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল।  কারণ ঢাকা শহরে দরজা খুলে রেখে দিতে নেই 

×