Mehedi Shamim on Press

সবার পারসোনাল ফাইন্যান্স বিষয়ক শিক্ষা থাকা জরুরি

By Mehedi Shamim | 17 Jun, 2023

সবার পারসোনাল ফাইন্যান্স বিষয়ক শিক্ষা থাকা জরুরি
 

মেহেদী শামীম, কাজ করছেন হেড অব ব্র্যান্ড, মার্কেটিং ও স্ট্রাটেজি পদে এপেক্স প্রপার্টিতে। এছাড়াও তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে পড়াচ্ছেন। তিনি সফলতার দূত্যি ছড়াচ্ছেন তার কর্মজীবনের সবখানে। শুরুটা সাংবাদিকতা, লেখালিখি, আর্ন্তজাতিক এনজিওতে সেচ্ছাসেবকের কাজ দিয়ে, তারপরে জাতীয় দৈনিকে, রেডিওতে কাজ করেছেন পড়াশুনার পাশাপাশি। তার কর্মজীবন খুবই বৈচিত্যময়, তিনি মিডিয়া, গার্মেন্টস শিল্প, কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, স্টার্টআপ, ই-কর্মাস, এবং প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট সেক্টরে কাজ করেছেন দীর্ঘ ৯ বছর ধরে । এছাড়াও তিনি লিখেছেন একটি কবিতার ও একটি ছোট গল্পের বই। তিনি পেয়েছেন ছোট গল্পের জন্য 'সুনীল সাহিত্য পুরস্কার ২০১১' । তার অর্জনের সংখ্যা অনেক, আমরা এখানে জানার চেষ্টা করবো তার এই কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে।

প্রশ্ন : কর্মজীবনে সফল হতে হলে কি ধরণের অভ্যাস তৈরি করতে হয় বলে মনে করেন আপনি?
উত্তর : এই প্রশ্নটার মতো চর্বিহীন থাকার অভ্যাসটা খুব জরুরি। সাধারণত আমরা ইন্টারভিউ প্রশ্ন করার সময়ে শুরুতে অনেক সুচনামূলক প্রশ্ন করে থাকি। কিন্তু আপনি যেভাবে শুরু করলেন, এটার অনুশীলন থাকলে সফলতা আসবে। যেমন আপনাকে শারীরিকভাবে চর্বিমুক্ত থাকতে হবে, তেমনি যোগযোগের ক্ষেত্রেও অকপট হতে হবে। বই পড়ার অভ্যাগ করতে হবে। প্রতিদিন কিছু না কিছু শিখতে হবে। আপনি যদি সততার অনুশীলন করেন, আপনার কাজে এবং কথায় তাহলে নিশ্চয়ই আপনার জীবন সাফল্য আসবে।

 

প্রশ্ন : এপেক্স প্রপার্টিতে নতুন জয়েন করেছেন, কেমন লাগছে কাজ করে প্রপার্টি সেক্টরে?
উত্তর : দারুণ লাগছে। নতুন চ্যালেঞ্জ নেয়া টা আমার এক ধরণের নেশা। এইখানে অনেক কিছু শেখা সুযোগ পাচ্ছি। এপেক্স একটা ভালো কোম্পানি। এখানে সবাই অনেক আন্তরিক। কোম্পানির কালচার, ও কোর ভ্যালুস নিয়ে তারা অনেক তৎপর। সাধারণত এইসব কালচার, ভ্যালুস, মিশন, ও ভিশন লেখা হয় কোম্পানির ওয়েবসাইট অথবা ব্রোশিওরে রেখে দেয়ার জন্য। কিন্তু এই কোম্পানিতে প্রতিনিয়ত এই সব অনুশীলন করা হয়। সবচেয়ে ভালো লেগেছে, এখানে ট্রেনিং ও এ্যাডুকেশনে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়। সবার মধ্যে বই পড়ার কালচার তৈরি করা হয়। সব মিলিয়ে অনেক উপভোগ করছি। আর প্রপার্টি কেনা-বেচা-ভাড়া এটা একটা ক্রমবর্ধমান মার্কেট। এখানে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই সেক্টরে দীর্ঘ সময় কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।

প্রশ্ন : একজন মার্কেটিং প্রফেশনাল হওয়ার জন্য কি ধরণের প্রস্তুতি নেয়া উচিত?
উত্তর : দেখেন আমরা যেকোন পেশায় থাকি না কেন, আমাদের একটা জিনিস করতে হয়ে। তাহলো কাউকে না কাউকে প্ররোচনা করা, শব্দটার ইংরেজি ভার্সন শুনতে বেশি ভালো লাগে- পারসিউ করা। একজন এইচআরের লোক মানুষকে পারসিউ করে, কোম্পানিতে জয়েন করার জন্য, একজন সেলস’র মানুষও পারসিউ করে তার প্রোডাক্টটা বেচার জন্য। একজন মার্কেটিং প্রফেশনালেরও প্রধানতম কাজ হলো পারসিউ করা। আমার মনে হয়, কেউ যদি পারসিউ করার দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এবং নিজের এই দক্ষতাটাকে প্রতিনিয়ত বাড়াতে থাকে, তার জন্য সবকিছু সহজ হয়ে যাবে। পারসিউ করার দক্ষতা অর্জন করতে হলে, একজন মানুষের অনেক কিছু জানতে হয় যা নানানভাবে আমরা শিখতে পারি, এবং শিখিও। কিন্তু আমাদের দেশে অফিসের বাইরের মানুষের পাশাপাশি, অফিসের ভিতরের ম্যানেজমেন্টকেও পারসিউ করতে হয়, নতুন কিছু করার জন্য। ’কিভাবে আপনার ম্যানেজমেন্টকে ম্যানেজ করবেন’ এই বিষয়ে তেমন কিছু শেখানো হয় না। কিন্তু এটা খুব জরুরি মার্কেটিং প্রফেশনালদের জন্য। কারণ তারাই একটা ব্র্যান্ড নতুন কিছু করে আলাদা করে তোলে। আর এই আলাদা করে তোলার জার্নিটা ব্যবসায় এর সব বিভাগকে বোঝানো একটু কঠিন। তার উপরে কোম্পানির সবাই মার্কেটিং বোঝে, সবাই কন্ট্রিবিউশন করতে চায়। এটা ভালো সবার মতামত পাওয়া, কিন্তু এটা কিছু খারাপ দিকও রয়েছে, যা ভয়ংকর যে কোন কোম্পানির জন্য।

প্রশ্ন : আপনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করেছেন, এটা কি আপনার পরিকল্পনায় ছিলো, নাকি স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে হয়েছে?
উত্তর : না তেমন পরিকল্পনা ছিলো না। তবে একটা সেক্টর থেকে অন্য সেক্টরে যাওয়া নিয়ে পরিকল্পনা ছিলো। আমি নিজেকে প্রস্তুত করতে চেয়েছি একজন বৈচিত্রপূর্ন মানুষ হিসেবে। আমি শুধু যে আলাদা সেক্টরেই কাজ করেছি তেমন না, আমি মর্কেটিং প্রফেশনে থাকা অবস্থায়ও অনেক ক্রস ফাংশনাল কাজ করেছি। যেমন ফাইন্যান্স’র কোন একটা প্রয়োজন হলো, আমি সেচ্ছায় গিয়ে কাজ করে দিয়েছি। আমি একটা জবে থাকার সময়েই আসলে চিন্তা করি আমার এরপরে কোন সেক্টরে এক্সপ্লোর করা উচিত। তবে শুরুতে বন্ধু অথবা সহকর্মীরা অনেকবার বলেছে, কাজের সেক্টর পরিবর্তন করলে গ্রোথ কমে যায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে হয়েছে ঠিক উল্টাটা। আমি সেক্টর পরিবর্তন করতে করতে, নিজেকে অনেক বৈচিত্রপূর্ন করে গড়ে তুলেছি। এখন কোন কাজ করতে হলে, আমি খুব সহজেই আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারি। প্রতিটি সেক্টরই আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তবে সেক্টর পরিবর্তন করলে, একটু বেশি পরিশ্রমও করতে হয়, চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। অনেক মানুষ আছে তারা এই চ্যালেঞ্জ নিতে চায় না। আবার অনেক কোম্পানি আছে যারা বিশ্বাস করে না যে অন্য সেক্টরের মানুষ এসে ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারবে। কিন্তু সফলতার হার সবচেয়ে বেশি অন্য সেক্টর থেকে আসা মানুষেরই। আমি কমফোর্টযোন থেকে বেড়িয়ে এসে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি, আর এটাই প্রধানতম শক্তি।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশা কেমন উপভোগ করছেন?
উত্তর : বরাবরই আমি যা কিছু শিখি তা অন্যকে শেখাতে পছন্দ করি। আমার ব্যাক্তিগত মিশন হলো আমার আশেপাশের মানুষদের দক্ষ করে তোলা এবং তাদের ভেতরে শক্তিটাকে খুঁজে বের করে দেয়া। আর যখন এই সুযোগ আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পেয়েছি, এটা খুবই সৌভাগ্যের আমার জন্য । আমি সত্যিই উপভোগ করছি, এই সংযোজনটা। আমি চেষ্টা করেছি আমার সবটুকু মনোযোগ দিয়ে তাদের শিক্ষা জীবনে প্রভাব ফেলতে। আর ডিজিটাল মার্কেটিং এর মতো একটা নতুন বিষয় ক্লাস কোর্স হিসেবে পেয়ে ছাত্রছাত্রীরাও উপভোগ করেছে। ক্লাসটা তখনই কার্যকর হয় যখন ছাত্র-ছাত্রীদের সক্রীয় সংশগ্রহন থাকে। এই বেপারেও আমি আনন্দিত, কারণ আমি সত্যিই খুব ভালো ছাত্র-ছাত্রী পেয়েছি আমার ক্লাসে। শিক্ষকতা আমাকে নতুন অনেক কিছু শিখিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ ও আমার ছাত্র-ছাত্রীর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।

প্রশ্ন : স্কুল-কলেজে শিখেছেন এমন কি কি যা আপনার এখন কাজে লাগছে?
উত্তর : অনেক কিছু। আমার ছোটবেলায় আসলে আমি বেশি সক্রীয় ছিলাম। আবৃত্তি করতাম, থিয়েটার করতাম, আর্ন্তজাতীক এনজিওতে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি। লেখালিখি ও সাংবাদিকতা করেছি। আমি অনেক শিখেছি ছোটবেলাতে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে বই নিয়ে বই পড়া থেকে শুরু, এরপরে একটা নেশা হয়ে গেছে বই পড়ার। ছোট বেলায় এই বই পড়ার অভ্যাসটা আমাকে প্রবলভাবে সাহায্য করেছে । আমি বলবো আমার স্কুল-কলেজের অবদান সবচেয়ে বেশি, আজকের মেহেদী শামীম হওয়ার পেছনে। একটি সত্যিকারের সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যে আমি বেড়ে উঠেছি, যা আমার মূল্যবোধ ও প্রগতিশীলতা মনোভাব তৈরিতে সাহায্য করেছে। আমি অনেক কৃতজ্ঞ সেই সব মানুষের প্রতি যারা বিশাল ভূমিকা পালন করেছে আমার বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে।

প্রশ্ন : আমরা জানি দেশে প্রচুর বেকার রয়েছে, আবার এটাও শোনা যায় আপনারা জব দেয়ার মতো মানুষ পাচ্ছেন না, এটা একটু ব্যাখ্যা করবেন?
উত্তর : এই প্রশ্নটা সব সময়ই ছিলো। আগে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দোষ দিতাম। তারা ক্লাসরুমে নতুন কিছু শেখান না, যা এই মুহূর্তে জব-মার্কেটে দরকার। কিন্তু এখন আর এই অযুহাত অথবা দোষ চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ এই সময়ে কোন কিছু শেখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সদিচ্ছা। আপনার ইচ্ছা থাকলে আপনি শিখে নিতে পারবেন, কারণ আপনার কাছে আছে ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট। আপনাকে তৈরি করার জন্য এই দুইটা জিনিস ছাড়া আর কিছুই লাগে না। আপনি যা হতে চান, আপনি তাই শিখতে পারবেন, এবং কাজে লাগাতে পারবেন আপনার কর্মজীবনে। শেখাটা যেমন খুবই সহজ হয়েগেছে, তেমনি কাজ পাওয়াটাও আরো সহজ হয়ে গেছে। আগে আমরা কাজের ক্ষেত্র হিসেবে শুধু বাংলাদেশকে চিন্তা করতাম। কিন্তু এখন কাজের ক্ষেত্র হয়েগেছে গোটা পৃথিবী। আপনি বাংলাদেশে বসে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের জন্য কাজ করতে পারবেন। এখন আসলে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা বেকার থাকবো, নাকি শিখবো এবং কাজ করবো।

প্রশ্ন : আগামীতে তরুণদের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে যদি আপনার কোনো মন্তব্য থাকে, বলবেন।
উত্তর : হ্যাঁ সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এই বছরটা এআই এর বছর। সবাই চ্যাটজিপিটি নিয়ে ব্যস্ত। এবং এটাকে অনুসরণ করে সব টেক কোম্পানিগুলো এআই এর দিকে নজর দিচ্ছে। তারা অনেক টাকা বিনিয়োগ করছে এআই এর পিছনে। এর ফলে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাচ্ছে। অনেক জব কমে যাচ্ছে, সময় বেচে যাচ্ছে, কারণ সাধারণ লেখালিখির সব কাজ এআই করে দিচ্ছে। তার মানে প্রাথমিক ধাপের যেই কাজগুলো আর্ন্তজাতীক বাজার থেকে আসতো আমাদের দেশে কিছুটা কমে যাবে। কিন্তু এআই আপনাকে সাহায্য করবে কর্মদক্ষতা বাড়াতে ও কাজের গতি বাড়াতে । এআই যেমন চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য, তেমনি অনেক সম্ভাবনাও নিয়ে এসেছে। এখন এই নতুন টেকনোলজি আমাদের কাজে লাগাতে হবে আমাদের প্রয়োজনে । যারা আগে থেকে এটার সাথে মানিয়ে নিতে পারছে, শিখে নিতে পারবে, তারাই এগিয়ে থাকবে।

প্রশ্ন : ধন্যবাদ আমাদের সময় দেয়ার জন্য। সবার উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতে চান।
উত্তর : সবার উদ্দেশ্য বলতে চাই, নতুন কিছু শেখার বিকল্প নেই। নিয়মিত বই পড়ুন। কিছু না কিছু শিখতে থাকুন। আর যেহেতু আমরা একটা নড়বড়ে অর্থনীতিতে বসবাস করছি। গোট পৃথিবীতেই অর্থনৈতিক অস্থিশীলতা তৈরি হয়ে আছে। সবাই পারসনাল ফাইন্যান্স এর বেপারে সচেতন হন। ফাইন্যান্সিয়াল শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা বেপার। আমরা অনেক সময় ভালো আয় করেও অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়ি। অর্থনৈতিক ঝুঁকি এড়াতে নিজেকে পারসনাল ফাইন্যান্স বিষয়ে শিক্ষিত করে তুলুন।

 

Click for the original online:  https://www.deshrupantor.com/corporate/2023/03/30/417382fbclid=IwAR37320vV6eD96M9nhOh3wksvNmL1SqbyK0tVO8RpA9xnntndHc8FDvWBAg

 
×