এতো যত্ন করে কেউ আগে কখনো আমাকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলেনি। প্রথম যেদিন তার মুখোমুখি হলাম অন্য রকম সেইদিনটি। তারপরে প্রতিদিনই শুনতে লাগলাম তার বেড়ে ওঠার গল্প। শৈশব-কৈশোর-যৌবন থেকে এই মুহুর্ত পর্যন্ত। অনেক অভিনব তার জীবনের রচনা শৈলী।
‘গ্রাম-পাহাড়-শহর-প্রেম-বিল্পব-মিছিল-স্লোগান-সাফল্য-ভ্রমণ-প্রবাসকাল’ এই চিত্রনাট্য সত্যি সবার কাছেই লোভনীয়। বইটিতে তিনি প্রকাশ করেছেন তার অতিত থেকে তুলে আনা সহজ-সরল-অনুভতি।
পাঠকের মধ্যে শুধু ভালো লাগাটুকুই বিনিময় করা হয়েছে। কারণ লেখক সমস্ত খারাপ-অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। সব সময় মানুষের সাফল্যের কথা তাকে আলোড়িত করে।
আমি লেখকের সাথে দীর্ঘ সময় ছিলাম। তার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছি। তাকে বোঝার চেষ্টা করেছি। আমি জানি না কতটা বুঝতে পেরেছি। তবে আমি যতটুকু বুঝেছি সবটাই বইটাতে আছে।
তিনি যখন বলতে শুরু করেন, মিছিল আর স্লোগানের কথা। তিনি যখন বলতে শুরু করেন সমাবেশের কথা তখন আমি চলচ্চিত্রের মতো বিশাল পর্দায় দেখতে পাই ঢাকার রাজপথ। এক ধরণের মাদকতায় পরে গিয়েছি আমি। শুনতে শুরু করলে আর থামতে ইচ্ছে করে না।
আমার একদিন মনে হয়েছিলো এই বইটা আমরা শেষ করবো না। প্রতিদিন শুধু লিখবোই। কারণ দিন যাচ্ছে আমাদের গল্প শেষ হচ্ছে না। পাতার পর পাতা লিখে যাচ্ছি। তবু যেন সামনে আরো আরো গল্প বেড়িয়ে আসছে মনের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে।
এখন পর্যন্ত আমার জীবনে মাত্র দুইবার পাহাড় দেখেছি। কিন্তু একবারও পাহাড়ে ওঠা হয়ে উঠেনি। পাহাড়কে আমি চিনেছি সুনীলের পাহাড় চূড়া কবিতা পড়ে।
কিন্তু আমি এখন যেই পাহাড়কে চিনি সেটা ভিন্ন এক পাহাড়। খুব আলাদা একটা পাহাড়। যেখানে উঠলে নিজেকে দেখা যায়। যেখানে দাঁড়িয়ে শুদ্ধ হয়ে ওঠা যায়। সেই গহীন পাহাড়ের মধ্যেই লেখক তার জীবনের শুরুটা করেছে।
তারপরে সংগ্রাম মিছিল স্লোগান সমাবেশ দেশের অসময়ে জেগে ওঠা কন্ঠ
সবকিছুই বইটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।
কখনো কখনো বইটি একান্ত মঞ্জুরের। আবার কখনো কখনো বইটি গোটা বাংলাদেশের।
আবার কখনো কখনো বইটি কিশোর অনুভূতির
আবার কখনো কখনো বইটি হয়ে উঠেছে সময়ের স্লোাগান।
কখনো আবার বইটি মিছিল বের করেছে রাজপথে কাঠামো ভাঙার।
বইয়ের ভিতরে সব সময়ই কথা বলেছে মঞ্জুর সাহেব। কখনো কখনো আমিও সঙ্গি হয়েছি তার তবে এই বইটির একটি শব্দও আমার না। যখন তিনি পাশে থাকেন তখনই শব্দ আসে। তখনই বাক্য তৈরি হয়।
শব্দে শব্দে বাক্যে বাক্যে যেই অনুভূতিলিপি মলাটবন্দী হলো সেই অনুভূতির মালিক এখন আর আমাদের দুজনের কেউ না। পাঠক তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করবে বইটি। ভালো-লাগা-মন্দ লাগা এই সব বিষয় নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। আমাদের মাথা ব্যাথা হলো বোধের জায়গায়তে।
শব্দ-বাক্যে চাষ করেছেন লেখক মঞ্জুর এখন ফসল কিভাবে প্রক্রিয়াজাত করবে পাঠক জানে।
বইটিতে বর্ণিত হয়েছে দুইটি গল্প একজন মঞ্জুর এবং একজন বাংলাদেশের বেড়ে ওঠার গল্প। দুটি অংশের বর্ণনায় এবং গল্প বলার ঢঙের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। বইটির শুরুর দিকের বর্ণনা, মধ্যকার বর্ণনা, শেষের দিকের বর্ণনার বিস্তর তফাৎ। কারণ সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে, গল্পের পেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। গল্পের বর্ণনার রঙ-ঢঙ একইভাবে পাল্টে গেছে।
পাঠকে গল্পের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়ার জন্যে মঞ্জুরের এক ধরণের চমৎকার কৌশল রপ্ত করা আছে। বইটির মধ্যে সিনেমাটিক ফ্লেভার কিন্তু প্রভলভাবেই দেখা যাবে। এই দুইটি বিষয় তার কলেজ জীবন থেকে আসা। তিনি প্রচুর চিত্রালি আর নিহারঞ্জনের উপন্যাস পড়তেন।
জীবনকে চিত্রায়ন করার মতো একটা সাহসী কাজ হাতে নিয়ে ভয় পেয়েছিলাম কি না জানি না। তবে এই জীবনে মানুষের অনুভূতির ভেতর দিয়ে অনেক দৌঁড়া-দৌঁড়ি করেছি। সবাই শুধু সুখ চায় কিন্তু মনের ভেতরে দুঃখের চাষ করে। কিন্তু লেখক একটু ভিন্ন ধরণের। উপর এবং ভেতর দুই জায়গাতেই একটিই চাওয়া। দুঃখ না সুখ লেখাটি পড়লেই বুঝতে পারবেন।
বইটিতে মিশ্র অনুভূতির চাষ হয়েছে। শব্দের গাঁথুনি। বাক্যের বুনন কতটুকু পাঠক স্পর্শ করবে জানি না। তবে সব ধরণের ভুলের ক্ষমা চেয়ে নিলাম। বিশেষ করে বানান এবং তথ্যের। চেষ্টা করেছি বার বার যাচাই করে বইটি প্রকাশ করতে।
শেষ লাইনে উদার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি পাঠকে, লেখকের এই পূর্নদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি পড়ার জন্যে।